ব্যর্থতা |
আজকে হঠাৎ সাত সমুদ্র তেরো নদী পার হ’তে সাধ জাগে, মনে হয় তবু যদি পক্ষপাতের বালাই না নিয়ে পক্ষীরাজ, চাষার ছেলের হাতে এসে যেত হঠাৎ আজ৷ তা হলে না হয় আকাশবিহার হ’ত সফল, টুকরো মেঘেরা যেতে-যেতে ছুঁয়ে যেত কপোল; জনারণ্যে কি রাজকন্যার নেইকো ঠাঁই? কাস্তেখানাকে বাগিয়ে আজকে ভাবছি তাই৷ অসি নাই থাক, হাতে তো আমার কাস্তে আছে, চাষার ছেলের অসিকে কি ভালবাসাতে আছে? তাই আমি যেতে চাই সেখানেই যেখানে পীড়ন, যেখানে ঝলসে উঠবে কাস্তে দৃপ্ত-কিরণ৷ হে রাজকন্যা, দৈত্যপুরীতে বন্দী থেকে নিজেকে মুক্ত করতে আমায় নিয়েছ ডেকে৷ হেমন্তে পাকা ফসল সামনে, তবু দিলে ডাক; তোমাকে মুক্ত করব, আজকে ধান কাটা থাক৷ রাজপুত্রের মতন যদিও নেই কৃপাণ, তবু মনে আশা, তাই কাস্তেতে দিচ্ছি শান, হে রাজকুমারী, আমাদের ঘরে আসতে তোমার মন চাইবে তো? হবে কষ্টের সমুদ্র পার? দৈত্যশালায় পাথরের ঘর, পালঙ্ক-খাট, আমাদের শুধু পর্ণ-কুটির, ফাঁকা ক্ষেত-মাঠ; সোনার শিকল নেই, আমাদের মুক্ত আকাশ, রাজার ঝিয়ারী! এখানে নিদ্রাহীন বারো মাস৷ এখানে দিন ও রাত্রি পরিশ্রমেই কাটে সূর্য এখানে দ্রুত ওঠে, নামে দেরিতে পাটে৷ হে রাজকন্যা, চলো যাই, আজ এলাম পাশে, পক্ষীরাজের অভাবে পা দেব কোমল ঘাসে৷ হে রাজকন্যা সাড়া দাও, কেন মৌন পাষাণ? আমার সঙ্গে ক্ষেতে গিয়ে তুমি তুলবে না ধান? হে রাজকন্যা, ঘুম ভাঙলো না? সোনার কাঠি কোথা থেকে পাব, আমরা নিঃস্ব, ক্ষেতেই খাটি৷ সোনার কাঠির সোনা নেই, আছে ধানের সোনা, তাতে কি হবে না? তবে তো বৃথাই অনুশোচনা॥ |