দিনবদলের পালা |
আর এক যুদ্ধ শেষ, পৃথিবীতে তবু কিছু জিজ্ঞাসা উন্মুখ । উদ্দাম ঢাকের শব্দে সে প্রশ্নের উত্তর কোথায় ? বিজয়ী বিশ্বের চোখ মুদে আসে, নামে এক ক্লান্তির জড়তা । রক্তাত প্রান্তর তার অদৃশ্য দুহাতে নাড়া দেয় পৃথিবীকে, সে প্রশ্নের উত্তর কোথায় ? তুষারখচিত মাঠে, ট্রেঞ্চে, শূন্যে, অরণ্যে, পর্বতে অস্থির বাতাস ঘোরে দুর্বোধ্য ধাঁধাঁয়, ভাঙা কামানের মুখে ধ্বংসস্তূপে উৎকীর্ণ জিজ্ঞাসা : কোথায় সে প্রশ্নের উত্তর ? দিগ্বিজয়ী দুঃশাসন ! বহু দীর্ঘ দীর্ঘতর দিন তুমি আছ দৃঢ় সিংহাসনে সমাসীন, হাতে হিসেবের খাতা উন্মুখর এই পৃথিবী : আজ তার শোধ করো ঋণ । |
অনেক নিয়েছ রক্ত, দিয়েছ অনেক অত্যাচার, আজ হোক তোমার বিচার । তুমি ভাব, তুমি শুধু নিতে পার প্রাণ, তোমার সহায় আছে নিষ্ঠুর কামান ; জানো নাকি আমাদেরও উষ্ণ বুক, রক্ত গাঢ় লাল, পেছনে রয়েছে বিশ্ব, ইঙ্গিত দিয়েছে মহাকাল, স্পীডোমিটারের মতো আমাদের হৃৎপিণ্ড উদ্দাম, প্রাণে গতিবেগ আনে, ছেয়ে ফেলে জনপদ-গ্রাম, বুঝেছি সবাই আমরা আমাদের কী দুঃখ নিঃসীম, দেখ ঘরে ঘরে আজ জেগে ওঠে এক এক ভীম । তবুও যে তুমি আজো সিংহাসনে আছ সে কেবল আমাদের বিরাট ক্ষমায় । এখানে অরণ্য স্তব্ধ, প্রতীক্ষা-উৎকীর্ণ চারিদিক, গঙ্গায় প্লাবন নেই, হিমালয় ধৈর্যের প্রতীক ; এ সুযোগে খুলে দাও ক্রূর শাসনের প্রদর্শনী, আমারা প্রহর শুধু গনি । পৃথিবীতে যুদ্ধ শেষ, বন্ধ সৈনিকের রক্ত ঢালা : ভেবেছো তোমার জয়, তোমার প্রাপ্য এ জয়মালা ; জানো না এখানে যুদ্ধ-শুরু দিনবদলের পালা॥ |