জনরব |
পাখি সব করে রব, রাত্রি শেষ ঘোষণা চৌদিকে, ভোরের কাকলি শুনি; অন্ধকার হয়ে আসে ফিকে, আমার ঘরেও রুদ্ধ অন্ধকার, স্পষ্ট নয় আলো, পাখিরা ভোরের বার্তা অকস্মাৎ আমাকে শোনালো। স্বপ্ন ভেঙে জেগে উঠি, অন্ধকারে খাড়া করি কান— পাখিদের মাতামাতি, শুনি মুখরিত ঐকতান; আজ এই রাত্রিশেষে বাইরে পাখির কলরবে রুদ্ধ ঘরে ব’সে ভাবি, হয়তো কিছু বা শুরু হবে, হয়তো এখনি কোনো মুক্তিদূত দুরন্ত রাখাল, মুক্তির অবাধ মাঠে নিয়ে যাবে জনতার পাল; স্বপ্নের কুসুমকলি হয়তো বা ফুটেছে কাননে, আমি কি খবর রাখি? আমি বদ্ধ থাকি গৃহকোণে, নির্বাসিত মন চিরকাল অন্ধকারে বাসা, তাইতো মুক্তির স্বপ্ন আমাদের নিতান্ত দুরাশা। জন-পাখিদের কণ্ঠে তবুও আলোর অভ্যর্থনা. দিকে দিকে প্রতিদিন অবিশ্রান্ত শুধু যায় শোনা; এরা তো নগণ্য জানি, তুচ্ছ ব’লে ক’রে থাকি ঘৃণা, আলোর খবর এরা কি ক’রে যে পায় তা জানি না। এদের মিলিত সুরে কেন যেন বুক ওঠে দুলে, অকস্মাৎ পূর্বদিকে মনের জানালা দিই খুলে : হঠাৎ বন্দর ছাড়া বাঁশি বুঝি বাজায় জাহাজ, চকিতে আমার মনে বিদ্যুৎ বিদীর্ণ হয় আজ। অদূরে হঠাৎ বাজে কারখানার পঞ্চজন্যধ্বনি, দেখি দলে দলে লোক ঘুম ভেঙে ছুটছে তখনি, মনে হয়, যদি বাজে মুক্তি-কারখানার তীব্র শাঁখ তবে কি হবে না জমা সেখানে জনতা লাখে লাখ? জন-পাখিদের গানে মুখরিত হবে কি আকাশ? —ভাবে নির্বাসিত মন, চিরকাল অন্ধকারে বাস। পখিদের মাতামাতি : বুঝি মুক্তি নয় অসম্ভব, যদিও ওঠে নি সূর্য, তবু আজ শুনি জনরব॥ |