পরিশিষ্ট |
অনেক উল্কার স্রোত বয়েছিল হঠাৎ প্রত্যুষে. বিনিদ্র তারার বক্ষে পল্লবিত মেঘ ছুঁয়েছিল রশ্মিটুকু প্রথম আবেগে। অকস্মাৎ কম্পমান অশরীরী দিন, রক্তের বাসরঘরে বিবর্ণ মৃত্যুর বীজ ছড়াল আসন্ন রাজপথে। তবু স্বপ্ন নয় : গোদূলীর প্রত্যহ ছায়ায় গোপন স্বাক্ষর সৃষ্টি কক্ষচ্যুত গ্রহ-উপবনে : দিগন্তের নিশ্চল আভাস ভস্মীভূত শ্মশানক্রন্দনে, রক্তিম আকাশচিহ্ন সবেগে প্রস্থান করে যূথ ব্যঞ্জনায়। নিষিদ্ধ কল্পনাগুলি বন্ধ্যা তবু অলক্ষ্যে প্রসব করে অব্যক্ত যন্ত্রণা, প্রথম যৌবন তার রক্তময় রিক্ত জয়টীকা স্তম্ভিত জীবন হতে নিঃশেষে নিশ্চিহ্ন ক’রে দিল। তারপর : প্রান্তিক যাত্রায় অতৃপ্ত রাত্রির স্বাদ, বাসর শয্যায় অসম্বৃত দীর্ঘশ্বাস বিস্মরণী সুরাপানে নিত্য নিমজ্জিত স্বগত জাহ্নবীজলে। তৃষ্ণার্ত কঙ্কাল অতীত অমৃত পানে দৃষ্টি হানে কত! সর্বগ্রাসী প্রলুব্ধ চিতার অপবাদে সভয়ে সন্ধান করে ইতিবৃত্ত দগ্ধপ্রায় মনে। প্রেতাত্মার প্রতিবিম্ব বার্ধক্যের প্রকম্পনে লীন, অনুর্বর জীবনের সূর্যোদয় : ভস্মশেষ চিতা। কুজ্ঝটিকা মূর্ছা গেল আলোক-সম্পাতে, বাসনা-উদ্গ্রীব চিন্তা উন্মুখ ধ্বংসের আর্তনাদে। |
সরীসৃপ বন্যা যেন জড়তার স্থির প্রতিবাদ, মানবিক অভিযানে নিশ্চিন্ত উষ্ণীষ! প্রচ্ছন্ন অগ্ন্যুৎপাতে সংজ্ঞাহীন মেরুদণ্ড-দিন নিতান্ত ভঙ্গুর, তাই উদ্যত সৃষ্টির ত্রাসে কাঁপে : পণ্যভারে জর্জরিত পাথেয় সংগ্রাম, চকিত হরিণদৃষ্টি অভুক্ত মনের পুষ্টিকর : অনাসক্ত চৈতন্যের অস্থায়ী প্রয়াণ। অথবা দৈবাৎ কোন নৈর্ব্যক্তিক আশার নিঃশ্বাস নগণ্য অঙ্গারতলে খুজেছে অন্তিম। রুদ্ধশ্বাস বসন্তের আদিম প্রকাশ, বিপ্রলব্ধ জনতার কুটিল বিষাক্ত পরিবাদে প্রত্যহ লাঞ্ছিত স্বপ্ন, স্পর্ধিত আঘাত! সুষুপ্ত প্রকোষ্ঠতলে তন্দ্রাহীন দ্বৈতাচারী নর নিজেরে বিনষ্ট করে উৎসারিত ধূমে, অদ্ভুত ব্যাধির হিমছায়া দীর্ণ করে নির্যাতিত শুদ্ধ কল্পনাকে; সদ্যমৃত-পৃথিবীর মানুষের মতো প্রত্যেক মানবমনে একই উত্তাপ অবসাদে। তবুও শার্দুল-মন অন্ধকারে সন্ধ্যার মিছিলে প্রথম বিস্ময়দৃষ্টি মেলে ধরে বিষাক্ত বিশ্বাসে। বহ্নিমান তপ্তশিখা উন্মেষিত প্রথম স্পর্ধায়— বিষকন্যা পৃথিবীর চক্রান্তে বিহ্বল উপস্থিত প্রহরী সভ্যতা। ধূসর অগ্নির পিণ্ড : উত্তাপবিহীন স্তিমিত মত্ততাগুলি স্তব্ধ নীহারিকা, মৃত্তিকার ধাত্রী অবশেষে॥ |