সেপ্টেম্বর '৪৬ |
কলকাতায় শান্তি নেই । রক্তের কলঙ্ক ডাকে মধ্যরাত্রে প্রতিটি সন্ধ্যায় । হৃৎস্পন্দনধ্বনি দ্রুত হয় : মূর্ছিত শহর । এখন গ্রামের মতো সন্ধ্যা হলে জনহীন নগরের পথ ; স্তম্ভিত আলোকস্তম্ভ আলো দেয় নিতান্ত সভয়ে । কোথায় দোকানপাট ? কই সেই জনতার স্রোত ? সন্ধ্যার আলোর বন্যা আজ আর তোলে নাকো জনতরণীর পাল শহরের পথে । ট্রাম নেই, বাস নেই — সাহসী পথিকহীন এ শহর আতঙ্ক ছড়ায় । সারি সারি বাড়ি সব মনে হয় কবরের মতো, মৃত মানুষের স্তূপ বুকে নিয়ে পড়ে আছে চুপ ক'রে সভয়ে নির্জনে । মাঝে মাঝে শব্দ হয় : মিলিটারী লরির গর্জন পথ বেয়ে ছুটে যায় বিদ্যুতের মতো সদম্ভ আক্রোশে । কলঙ্কিত কালো কালো রক্তের মতন অন্ধকার হানা দেয় অতন্দ্র শহরে ; হয়তো অনেক রাত্রে পথচারী কুকুরের দল মানুষের দেখাদেখি |
স্বজাতিকে দেখে আস্ফালন, আক্রমণ করে । রুদ্ধশ্বাস এ শহর ছট্ফট করে সারা রাত — কখন সকাল হবে ? জীয়নকাঠির স্পর্শ পাওয়া যাবে উজ্জ্বল রোদ্দুরে ? সন্ধ্যা থেকে প্রত্যুষের দীর্ঘকাল প্রহরে প্রহরে সশব্দে জিজ্ঞাসা করে ঘড়ির ঘন্টায় ধৈর্যহীন শহরের প্রাণ : এর চেয়ে ছুরি কি নিষ্ঠুর ? বাদুরের মতো কালো অন্ধকার ভর ক'রে গুজবের ডানা উৎকর্ণ কানের কাছে সারা রাত ঘুরপাক খায় । স্তব্ধতা কাঁপিয়ে দিয়ে কখনো বা গৃহস্থের দ্বারে উদ্ধত, অটল আর সুগম্ভীর শব্দ ওঠে কঠিন বুটের । শহর মূর্ছিত হয়ে পড়ে । জুলাই ! জুলাই ! আবার আসুক ফিরে আজকের কলকাতার এ প্রার্থনা ; দিকে দিকে শুধু মানুষের কোলাহল — এখনো পায়ের শব্দ যাচ্ছে শোনা । অক্টোবরকে জুলাই হতেই হবে আবার সবাই দাঁড়াব সবার পাশে, আগস্ট এবং সেপ্টম্বর মাস এবারের মতো মুছে যাক ইতিহাসে॥ |